বিশ্বকাপে টানা ৬ হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। শ্রীলংকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল টাইগাররা। তবে হার-জিত সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনা যেন চলছে একটি বিষয়কে ঘিরেই, সেটি হচ্ছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড আউট হওয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম টাইমড আউট হওয়া ব্যাটার হচ্ছেন ম্যাথিউস।

টসে জিতে আগে ব্যাটে নামে শ্রীলংকা। ইনিংসের ২৫তম ওভারে ঘটেছে ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি। ৪ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে আসতে ২ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে ফেলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী নতুন ব্যাটার ২ মিনিটের মধ্যে ক্রিজে এসে বল মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছুটা দেরি করে ফেলেন ম্যাথিউস। আর তখন বোলার সাকিব আল হাসান আউটের আবেদন করলে ম্যাথিউসকে টাইমড আউট দিয়ে দেন মাঠে থাকা আম্পায়াররা। ম্যাচ শেষে এই ঘটনা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ ঝেড়েছেন ম্যাথিউস। বাংলাদেশ দল এবং সাকিবের কমনসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এছাড়াও জানিয়েছেন তিনি নাকি আউট ছিলেন না। তাদের কাছে ভিডিওসহ প্রমাণ আছে বলেও জানিয়েছেন লংকান অলরাউন্ডার।

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউস বলেন, ‘আসলে আজকের আগ পর্যন্ত আমার সাকিবের প্রতি এবং বাংলাদেশ দলের প্রতি অনেক সম্মান ছিল। আমরা সবাই জেতার জন্যই খেলি। যদি এমন হত যে এটি নিয়মের মধ্যে তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। নিয়মে বলা আছে আমাকে ২ মিনিটের মধ্যে ক্রিজে যেতে হবে। আমাদের কাছে ভিডিওসহ প্রমাণ আছে। আমি কেবল এসেই এখানে কথা বলছি না। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। আমার হেলমেট ভাঙার পরেও আরও ৫ সেকেন্ড সময় বাকি ছিল। এখন কি আমি হেলমেট ছাড়াই গার্ড নেব? আমরা তো ক্রিকেটারদের সুরক্ষার ব্যাপারে কথা বলি তাই না? এখানে পুরোটাই কমনসেন্সের ব্যাপার। আম্পায়াররাও এখানে আরও দায়িত্বশীল হয়ে ঘটনাটা চেক করে দেখতে পারতেন।’

ক্রিকেটে মাঝে মাঝেই দেখা যায় দুর্ভাগ্যজনক আউট। এসব ক্ষেত্রে নিয়মের পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউস বলেন, ‘মানকাডিং বা অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের আউটে তো আসলে সবকিছু পরিষ্কার। মানকাডিংয়ে বলা হয়েছে আপনি যদি ক্রিজের বাইরে থাকেন তাহলে বোলার আপনাকে আউট করে দিতে পারবে। (অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের ক্ষেত্রে) বলকে যদি আপনি বাঁধা দেন তাহলে আপনি আউট হতে পারেন। কিন্তু এখানে কমনসেন্সটা কোথায়? আমার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে আমি কখনও একটি দলকে এতটা নিচে নামতে দেখিনি। আম্পায়াররা বিষয়টি আরও একবার চেক করে দেখতে পারতেন। আমি বলছি না যে আমি খেললে ম্যাচ জিতে যেতাম। কিন্তু আপনার তো কমনসেন্স থাকতে হবে। এখানে পরিষ্কারভাবেই হেলমেট ভেঙেছে। এমন তো নয় যে আমি টেনে ভেঙে ফেলেছি। আমার হাতে সময়ও ছিল। আমি খুবই অবাক।’

আম্পায়ারের সিদ্ধান্তেই মূলত আউট হয়েছেন ম্যাথিউস। তবে সেই সিদ্ধান্তকে ভুল বলছেন ম্যাথিউস। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউস বলেন, ‘আমার মতে, হ্যাঁ। কারণ আমি ভুল কিছু করিনি। এটা কার দোষ? এখানে বিষয়টি টেকনিক্যাল। যা নিয়ে আলোচনা করা দরকার ছিল। এটি বিশ্বকাপের ম্যাচ। যদি শেষ উইকেটে এটি ঘটত যখন আপনার ৩-৪ রান দরকার ছিল (তখন কী হত?)। আমি তো সময় নষ্ট করিনি, কোনো বাড়তি সুবিধাও নিতে চাইনি। এটি ছিল যান্ত্রিক ত্রুটি। যা আমার ক্যারিয়ারে প্রথমবার ঘটল। আমি খুবই অবাক। আমি বলছি না যে আমি থাকলে ম্যাচ জিতে যেতাম। তবে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হয়ত আমরা আরও বেশি রানও করতে পারতাম। আপনি আগে থেকেই কিছু বলতে পারবেন না তাই না?’

দিনশেষে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে এখন পয়েন্ট টেবিলের ৭ নম্বরে উঠে গেছে টাইগাররা, লংকানরা নেমেছে ৮ নম্বরে।